শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

উপমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির তিন বছরেও তৈরি হয়নি গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প

উপমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির তিন বছরেও তৈরি হয়নি গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টারঃ বন্যায় গাইবান্ধা জেলা শহর প্লাবিত হলে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই গাইবান্ধা এসে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ. কে. এম এনামুল হক শামীম ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতির তিন বছর পার হলেও আলাই নদীর ডান তীরে গাইবান্ধা শহরে কোন বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করেনি গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা পৌরসভার কুঠিপাড়া এলাকা থেকে শুরু হয়ে বাদিয়াখালী ব্রীজ পর্যন্ত আলাই নদীর দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে আশির দশকের শেষের দিকে নদীটির বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয় মাত্র ১৫ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। এখনো বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ করতে বাকী রয়েছে ১৪ দশমিক ২৫ কিলোমিটার এলাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলাই নদীর ডান তীরে কোন বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ২০১৯ সালের বন্যায় আলাই নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধা শহর বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। ভবিষ্যতেও এ নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেলে আবারো গাইবান্ধা শহর বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে শহরবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসের বন্যায় আলাই নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ডান তীরে কোন বাঁধ না থাকায় গাইবান্ধা শহরে পানি প্রবেশ করে। বন্যার এই পানি পোঁছায় খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়েও। এরপর ১৯ জুলাই জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ. কে. এম. এনামুল হক শামীম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ কামালসহ স্থানীয় সাংসদ ও বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ. কে. এম. এনামুল হক শামীম বলেন, গাইবান্ধা শহর রক্ষায় একটি বেড়ি বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধটির নির্মাণ কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে। এই বাঁধটি নির্মাণ হলে একদিকে যেমন গাইবান্ধা শহর রক্ষা হবে তেমনি বন্যার্ত মানুষও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির তিন বছরেও একটি প্রকল্প তৈরি করেনি গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমনকি বাঁধ নির্মাণের জন্য কোন বরাদ্দও পায়নি গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেসময় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোঃ মোখলেছুর রহমান। আর বর্তমানে কর্মরত আছেন মোঃ আবু রায়হান।
শহরের কুঠিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় অনেকের ঘরের ভেতরে এক বুক পানি উঠেছিল। ফলে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্রসহ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সোনাইল বাঁধে আশ্রয় নেয় মানুষ। সেসময় অনেক পরিবার বাঁধে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছে। বৃষ্টিতে ভিজে ও খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করেছে। সেসময় শুনেছি আলাই নদীর ডান তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হবে। কিন্তু আজও সেই বাঁধ দেখতে পাচ্ছি না। মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, হঠাৎ করে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। পানি বাড়বে না মনে করে অন্যত্র না নেওয়ায় ঘরে অনেক পানি উঠে অনেকের মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৯ সালের ওই বন্যায় বহু মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা মানুষ আজও ভুলতে পারেনি।
গাইবান্ধা যুব নাগরিক কমিটির আহবায়ক জিয়াউল হক জনি বলেন, একটি জেলার প্রাণকেন্দ্র হলো সেই জেলার মূল শহর। কেননা প্রতিদিনই এই শহরে সব উপজেলার মানুষকে নানান কাজে আসতে হয়। ২০১৯ সালের ওই বন্যায় শহরে পানি প্রবেশ করায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়ে। অনেকের দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আলাই নদীর ডান তীরে বাঁধ নির্মাণ করা থাকলে শহরের মানুষ বন্যা দেখতো না। কারো ক্ষয়ক্ষতিও হতো না। শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে আলাই নদীতে একটি শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করায় ওই বন্যায় বহু মানুষকে কষ্টের শিকার হতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধা পাউবোর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সেই সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতির কথা পত্রিকা থেকে জেনেছি। যা কার্যালয়ের সবাই জানে। এতোদিনেও বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত কোন প্রকল্প তৈরি না হওয়ার বিষয়টি উর্দ্ধতন কমকর্তারা বলতে পারবেন। এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, আলাই নদীতে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয় গাইবান্ধা পৌরসভার কুঠিপাড়া এলাকায় রেগুলেটরের (স্লুইচগেট) মাধ্যমে। তাই ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ ও সোনাইল বাঁধ ভেঙে না গেলে আলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরে বন্যা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এজন্য ঘাঘট নদীর শহর রক্ষা বাঁধ ও সোনাইল বাঁধ মজবুত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে বাঁধ ভেঙে আলাই নদীতে কখনো অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি না পায়। একই বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু রায়হান বলেন, ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধা শহর রক্ষায় আলাই নদীর ডান তীরে বাঁধ নির্মাণের কোন প্রকল্প নেই। এই বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত কোন প্রকল্পও আমরা প্রস্তুত করছি না। আর এই বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত কোন বরাদ্দও আমরা পাইনি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com